শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম নিরপেক্ষতার গুরুত্ব-বিদ্যাসাগর মহাশয় বলতেন- আমাদের দেশে এমন শিক্ষক চাই,যারা বাংলা ভাষা জানেন, ইংরেজি জানেন.আর চাই ধর্মীয় সংস্কার মুক্ত শিক্ষক। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে, বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষা দান করবেন এর সাথে ধর্মীয় সংস্কার এর কী সম্পর্ক? সম্পর্ক আছে, এবং তা যথেষ্ট গভীর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর পাঠ্যক্রম বিজ্ঞান নির্ভর, আর ধর্ম বিশ্বাস(পড়ুন অন্ধবিশ্বাস) নির্ভর। পরস্পরের সাথে চরম ভাবে সাংঘর্ষিক। এবার ধরুন এক বাংলার শিক্ষক ভাষার উৎপত্তির ইতিহাস যখন পড়াবেন, তখন ওনাকে আদিম গুহা মানব এর দেয়াল এ আঁচড় কেটে চিহ্ন আঁকিবুকি থেকেই শুরু করতে হবে সে বলতে পারবে না দেবী সরস্বতী স্বয়ং এসে বিদ্যা দান করে গেছেন। সমস্যাটা এখানেই। প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তি কতটা আত্মবিশ্বাস এর সাথে এগুলো শিক্ষার্থীদের ব্যাখ্যা করবেন এটা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। কারণ যে মুহূর্তে বলবেন আমাদের পূর্বপুরুষ গুহা মানব ভাষার সৃষ্টিকর্তা তিনি নিজের ধর্মের সাথে বেইমানি করবেন। যেটা ধার্মিকরা খুব সহজে করতে চায় না। আবার ধরে নিলাম উনি ধর্মকে সাইড-এ রেখে এটাই পড়ালেন, এবার উনি বাড়ি গিয়ে যখন আবার দেবী সরস্বতীর চরণে লুটিয়ে পড়বেন তখন কিন্তু নিজের শিক্ষা, পেশা সব কিছুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে কারণ কোনো বৈজ্ঞানিক শিক্ষা কাল্পনিক দেব দেবীকে মেনে নেয় না। উনি ইতিহাস পড়িয়ে ধর্মের সাথে বেইমানী করলেন, আবার ধর্ম পালন করে নিজের পেশার সাথে বেইমানী করলেন। এরকম দু নৌকায় পা দিয়ে চলা শিক্ষক সমাজের জন্য কতটা নিরাপদ সেটা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
ধর্ম আর বিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক এই কথাটা ডাহা মিথ্যা।
হাতে গ্রহের দোষ কাটানোর রত্ন পড়া শিক্ষক কোন যুক্তিতে শিক্ষার্থীদের গ্রহণ এর কারণ বোঝাবেন সেটাই বোধগম্য হয় না। অথবা ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন বিশ্বাস করা ব্যক্তি কোন যুক্তিতে বিবর্তন পড়াবেন। পড়ালেও তা পারিশ্রমিক এর লোভের বশবর্তী হয়ে, জ্ঞান চর্চার জন্য তো মোটেও নয় শিক্ষা বেছে নিলে ধর্ম অবমাননা হয়, ধর্ম বেছে নিলে শিক্ষা অবমাননা হওয়া আবশ্যক। যারা ধর্ম আর বিজ্ঞান শিক্ষাকে সহাবস্থান করাতে চায় তারা হয় চরম লেভেল এর নির্বোধ অথবা চরম ধুরন্ধর।